পৌরসভার ৬৯ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ৪৩ কিলোমিটারই কাঁচা

স্টাফ রিপোর্টার : পৌরসভা মানে উন্নত জীবনমান, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা, গ্যাস সুবিধাসহ খেলাধুলার পর্যাপ্ত মাঠ, শিক্ষা সংস্কৃতির উপকরণগুলো সহজলভ্য হওয়া। এসবের মধ্যে নারায়ণপুর পৌরসভায় শুধুমাত্র শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। গ্যাস সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে বর্তমান পৌর সহায়ক কমিটির সদস্যবৃন্দ কিছু বলতে পারছেন না। তবে এটুকু বলে সান্ত¡না দিচ্ছেন, সরকারিভাবে নতুন করে আবাসিক কোনো গ্যাস সংযোগ দেয়া যাবে না। খেলার মাঠ বলতে রয়েছে নারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজ মাঠ এবং পয়ালী কেবিএম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছোটখাটো খেলার মাঠ রয়েছে।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার মধ্যে পড়েছে নারায়ণপুর পৌরসভা। যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর। পৌর নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান যেমনই হোক না কেনো পৌরসভার অধিবাসী হিসেবেই এখন তাদের পরিচয়।

একটি এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক হলো তার যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে নারায়ণপুর পৌরসভা অনেক পিছিয়ে। নারায়ণপুর পূর্ব বাজার থেকে জোড়পুল কাশিমপুর হয়ে বলাখাল যাওয়ার রাস্তার যে অংশ নারায়ণপুর পৌরসভায় পড়েছে, এতটুকুই পাকা রাস্তা। এছাড়া মতলবের দগরপুর থেকে নারায়ণপুর পৌরসভার ভেতর দিয়ে কচুয়া যাওয়ার রাস্তার যে অংশটুকু পৌরসভায় পড়েছে সে অংশটুকু পাকা। এর বাইরে মূল রাস্তা থেকে গ্রামের ভেতর দিয়ে যাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রয়েছে, যেগুলো শুকনো মৌসুম ছাড়া বর্ষা মৌসুমে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন ঐ সব এলাকার সাধারণ মানুষ, স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী এবং অসুস্থ রোগী আনা নেয়ার ক্ষেত্রে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। এসব রাস্তা-ঘাটের দ্রুত সংস্কার চান ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা এলজিইডি অফিসের তথ্যমতে, ২৪টি মৌজা নিয়ে ৭.৮৪ বর্গ কিলোমিটারের নারায়ণপুর পৌরসভার মোট সড়কের দৈর্ঘ্য ৬৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা সড়ক মাত্র ১৯ কিলোমিটার। কাঁচা সড়ক ৪৩ কিলোমিটার এবং ইটের হেরিংবন ৭ কিলোমিটার। সড়কের এই চিত্র থেকে অনুমান করা যায় নারায়ণপুর পৌরসভা যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে কতটা পিছিয়ে আছে। তবে ৭ কিলোমিটার ইটের হেরিংবনের মধ্যে গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বাংলাবাজার হয়ে চারটভাঙ্গা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে পিচ ঢালাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে।

নারায়ণপুর পৌরসভার কালিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রকৌশলী মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। চারটভাঙ্গা, হরিদাস পাড়া, বাংলাবাজার, কালিকাপুর, কাশিমপুর এলাকা থেকে বর্তমান নারায়ণপুর পৌর কার্যালয়ে যেতে একজন মানুষের দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে। যা এ এলাকার শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীর যাতায়াতের জন্যে অনেক কষ্টের। তিনি আরও বলেন, নারায়ণপুর পৌরসভা হোক আর ইউনিয়ন পরিষদ হোক সেটা আমরা বুঝতে চাই না। আমরা এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন চাই এবং জনপ্রতিনিধি চাই। যাদের কাছে আমরা আমাদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারবো। তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে নারায়ণপুর বাজারে আসতে আমাদের যে সময় লাগে নারায়ণপুর থেকে কালিকাপুর যেতে তার কাছাকাছি সময় লাগে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, নারায়ণপুর পৌরসভার এরিয়ার ভেতরের সড়কের সমস্যা আমাদের নথিভুক্ত আছে। সড়ক উন্নয়নের জন্যে চাঁদপুর-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মতলব দক্ষিণের জন্য ৫ থেকে ৭টা বরাদ্দ পেতে পারেন। এর মধ্য থেকে ২টা বরাদ্দ নারায়ণপুর পৌরসভার জন্যে অনুমোদন করা যাবে বলে আমি আশাবাদী। এই বরাদ্দ আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে হতে পারে বলে তিনি জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পৌরসভার সকল কার্যক্রম চালু হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাজ সীমিত হয়ে যাবে।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তফা তালুকদার বলেন, নারায়ণপুরটা পৌরসভা হবে নাকি ইউনিয়ন পরিষদ হবে এই জটিলতায় দীর্ঘদিন উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েছে। এলাকার রাস্তাঘাটের চিত্র দুঃখজনক। আমি এলাকার বাসিন্দা হিসেবে সকল জটিলতার সমাধান চাই এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি চাই। তাহলেই উন্নয়ন তার স্বাভাবিক গতিতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নারায়ণপুর পৌরসভার রাস্তাঘাটের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আমার সবসময়ই যোগাযোগ আছে।

Related posts

Leave a Comment